ইমতিয়াজ আল ফারুকঃ ঠাকুরগাঁওয়ে সরকারের বরাদ্দকৃত প্রকল্পের অর্থ খরচে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। যদিও গ্রামীন অবকাঠামোসহ গ্রামাঞ্চলের মানুষের দূর্ভোগ কমাতে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়ার কথা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শহরের বিলাসিতায় সৌন্দর্য বর্ধনে খরচ করা হচ্ছে। এতে সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন গ্রামাঞ্চলের মানুষেরা। আর জেলা প্রশাসকের দাবি কমিটির সিন্ধান্ত অনুযায়ী প্রকল্পের অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে।
সরকারের প্রতিটি প্রকল্প যথাযথ বাস্তবায়নে কার্যত প্রদক্ষেপ গ্রহন করেন জেলা প্রশাসন। তবে ঠাকুরগাঁওয়ের চিত্র ভিন্ন। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ হওয়া ‘টিআর’ প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থের বড় অংশই খরচ হচ্ছে জেলা শহর ও সরকারি দপ্তরের সৌন্দর্য বর্ধনে। অথচ গ্রামে এখনো কাঁচা রাস্তা, জরাজীর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর বেহাল অবকাঠামো পড়ে আছে সংস্কারের অভাবে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় টিআর প্রকল্পে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসকের অনুকূলে গৃহীত প্রকল্পের তালিকায় দেখা গেছে, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে ফোয়ারা, বাগান ও ওয়াকওয়ে নির্মাণে খরচ হয়েছে কয়েক লাখ টাকা। তাছাড়া শিল্পকলা একাডেমি, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আলেঅকসজ্জা, বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল, ক্যালেক্টরেট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ সহ শহরের একাধিক দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যদিও সদর উপজেলার বরাদ্দের টাকা খরচ হওয়ার কথা গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়নে। ফলে প্রকৃত প্রকল্পের অর্থ যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ায় সেবা বঞ্চিত হচ্ছে গ্রামাঞ্চলের মানুষেরা।
জেলা সদরের মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা সোহেল রানা, আব্দুল জব্বার, কফিল উদ্দিনসহ অনেকে জানান, বছরের পর বছর ঘুরে সংস্কার হয়না গ্রামীণ সড়ক, বৃস্টি হলেই কাঁচা রাস্তা দিয়ে চলাচলে কঠিন অবস্থা তৈরি হয়। ছেলে মেয়েরা কাদা মাটি পেড়িয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যায়। অথচ শহরে ফুলবাগানে টাকা খরচ হয়! গ্রামের মানুষের জন্য সরকারের বরাদ্দকৃত প্রকল্পের অর্থ কোথায় যায়?
এ বিষয়ে জেলা নাগরিক উন্নয়ন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল করিম রুবেল ও সাংস্কৃতিক কর্মী মাসুদ আহমেদ সুবর্ণ জানান, সদর উপজেলায় সরকারের বরাদ্দকৃত টিআর প্রকল্পের টাকা গ্রামেই খরচ হওয়া উচিত, শহরে সৌন্দর্য বর্ধনে নয়। এটা গ্রামের মানুষের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তারা।
আর জেলা আইনজীবী সমিতির অ্যাডভোকেট মহসিন ভূঁইয়া জানান, আমাদের গ্রামীন উন্নয়নের জন্য যে বরাদ্দ আসে তা গ্রামের জন্যই ব্যবহার হওয়া উচিত। আমাদের দেশের বেশিরভাগ গ্রামই এখনো অবহেলিত হয়ে আছে। যথাযথ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে গ্রাম রুপ নিবে শহরের মতই।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাইরুল ইসলাম জানান, এখানে অনিয়মের কোন সুযোগ নেই। উন্নয়নের ক্ষেত্রেই সরকারের প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এখানে জেলা প্রশাসক, পৌরসভা, ইউনিয়নের জন্য আলাদা আলাদা প্রকল্প রয়েছে। আর সে হিসেবেই কাজ হচ্ছে।
আর প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা জানান, এই বরাদ্দের ম্যাক্সিমামটা আমরা নীতিমালা অনুযায়ী গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়নের জন্যই কাজ করছি। আমার কিছু প্রকল্প ছিল যেখানে স্থানীয় জনসাধারণের আগ্রহ ও দাবির প্রেক্ষিতে সৌন্দর্য বর্ধনের কিছুটা যেমন ছেলে মেয়েদের খেলা মাঠে উন্নয়নমূলক কিছু কাজসহ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নে খরচ হচ্ছে বলে জানান তিনি।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে টিআর প্রকল্পে যেসব খাতে খরচ হয়েছে-
১.ডিসি কার্যালয় চত্বরের বাগান সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য ফোয়ারা নির্মাণ, ৩৫০,০০০।
২. ডিসি কার্যালয় চত্বরের নির্মিত বাগানে ওয়াকওয়ে নির্মাণ, ২,৫০,০০০।
৩.জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ট্রেজারির সামনে সৌন্দর্য বর্ধনে বাগান সৃজন বেষ্টনী নির্মাণ ১৫০,০০০।
৪. ডিসি কার্যালয় চত্বরের বাগান সৃজন ও বেষ্টমী রং করণ ২,০০,০০০।
৫. ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা পরিষদ ভবনে নিচ তলায় পাঠাগার কাম ওয়েটিং রুম উন্নয়ন/স্থাপন, ৩,০০,০০০।
৬. ঠাকুরগাঁও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন সংস্কার, ১,১৫,০০০।
৭. ঠাকুরগাঁও শিল্পকলা একাডেমির ওয়াল নির্মাণ, ৩,৫০,০০০।
৮. ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় বড় মাঠে বসার বেঞ্চ ও বুক কেস নির্মাণ (বইসহ) ২,৫০,০০০।
৯. একতা প্রতিবন্ধী স্কুলের উন্নয়ন (আসবাবপত্র ক্রয়), ১,৫০,০০০।
১০ .বিয়াম ল্যাবরেটরী স্কুলের কানেক্টিং রোড নির্মাণ, ৩,৫০,০০০।
১১. ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় বড় মাঠ ভেজানোর জন্য পাম্পসহ পানি সরবরাহ লাইন স্থাপন, ২,৮৫,০০০।
১২. ঠাকুরগাঁও কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের উন্নয়ন, ২,৫০,০০০।
১৩. জেলা ত্রাণ গুদাম কাম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্য কেন্দ্রে নিরাপত্তার জন্য কলাপসিবল গেইট ও গ্রিল নির্মাণ, ২,০০,০০০।
১৪. শোল্টহরি আলীম মাদ্রাসা উন্নয়ন, ২,০০,০০০।
১৫.সালন্দর উচ্চ বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ ৩,৫০,০০০।
১৬.পুর্ব কালিকাগাঁও শাহপাড়া জামে মসজিদের উন্নয়ন, ২,০০,০০০।
তবে স্থানীয়রা বলছেন, টিআর প্রকল্প শহুরে খাতে ব্যয় করার ফলে প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে এবং গ্রামের প্রকৃত চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। এসব প্রকল্পও যথাযথ বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না তা উর্ধতনদের খতিয়ে দেখার দাবি তুলেন।